,

কালীগঞ্জে মালিকানাধীর জমির ওপর খাল খননের অভিযোগ

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে খাস জমি রেখে ব্যাক্তি মালিকানাধিন ফসলি জমিতে খাল পুনঃখননের অভিযোগ উঠেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিয়েও প্রভাবশালীদের দাফটে সুফল পাননি নিরহ কৃষরা।

ফলে জিবিকার একমাত্র অবলম্বন কৃষি জমি চাষাবাদে ব্যর্থ হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসেছেন তিনটি কৃষক পরিবার। অবশেষে জমি উদ্ধারে আদালতের দারস্থ হন কৃষরা।

মামলা ও অভিযোগে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার শ্রীখাতা মৌজার এক একর ৯০ শতাংশ জমি পৈত্রিক ও কবলা সুত্রে মালিকানা হিসেবে দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে ভোগদখল করছেন উপজেলার গেগরা গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলী খন্দকারের নাতি শফিকুল ইসলাম খন্দকার, আশাদুজ্জামান খন্দকার ও আনোয়ারুল ইসলাম খন্দকার। ব্যাক্তি মালিকানা হিসেবে ওই জমি ভুমি উন্নয়ন করও পরিশোধ করেন তারা। জমিটির উত্তর পাশ্বে ভেটেশ্বর খাল প্রবাহিত। আর এ জমির ফসলই তাদের উপার্জনের একমাত্র পথ।

সাম্প্রতি সময় সরকার খালটি পুনঃখননের উদ্যোগ গ্রহন করলে মুল খাল রেখে দক্ষিণে তিন কৃষকের মালিকানাধিন জমিতে লাল নিশানা সাটান পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি), ইউএনও এবং জেলা প্রশাসককে লিখিত ভাবে কয়েক দফায় অভিযোগ করে তদন্তের দাবি জানান ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা। কর্মকর্তাদের হাতে পায়ে ধরেও অভিযোগটির সরেজমিন তদন্ত করাতে পারেননি তারা। অপরদিকে প্রভাবশালী ভুমি দস্যুদের মোটা অংকের টাকার জোরে তদন্তের অযুহাতে দীর্ঘ সময় ক্ষেপন করে খাল পুনঃখনন চালিয়ে যায় প্রশাসন।

কোন রুপ নোটিশ ছাড়াই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা মুল খালের উত্তরে থাকা প্রভাবশালী ভুমি মালিকদের মাধ্যমে অবৈধ সুবিধা গ্রহন করে খালটি খাস জমি থেকে দক্ষিনে ব্যাক্তি মালিকানাধিন জমিতে সড়ায়ে নেয়। ফলে প্রভাবশালীরা খাস জমির মালিক বনে যান। অপর দিকে ব্যাক্তি মালিকানাধিন জমিতে খালটি স্থানান্তরীত হওয়ায় ভুমিহীন হয়ে পড়েন তিনটি কৃষক পরিবার।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিনে এক কোটি ৯০ লাখ ৫০ হাজার টাকা চুক্তিমুল্যে ৮ কিলোমিটার খালটি পুনঃখনন কাজ শুরু করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স তাজুল ইসলাম। প্রথম দিকে বাঁধা দিতে গিয়ে প্রভাবশালীদের সহায়তায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা সরকারী কাজে বাঁধাদান মামলার হুমকী প্রদান করে জোরপুর্ব ৩শত মেহগনি গাছ, বাঁশ বাগান ও ফসলি জমির উপর ভেকু মেশিনে খাল খনন করে পুর্বে খাল ভরাট করে প্রভাবশালীদের দখলে দেন।

অবশেষে বেঁচে থাকার অবলম্বন জমিটুকু উদ্ধার ও ক্ষতিপুরন চেয়ে সরকার তথা ভূমি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিবাদি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন তিন কৃষক। কিন্তু সরকার পক্ষ তিন দফায় সময় চেয়েও অতিরিক্ত আরো দুই দফায় আদলতে গড়হাজির থাকেন। ফলে কোন সুরাহা না হওয়ায় পুনরায় জমি উদ্ধারে হতাশায় ভুগছেন কৃষকরা। প্রায় দুই শত মণ ধান উৎপাদনের জমির কাগজে মালিক থেকেও ভূমিহীন হয়ে মানবেতর জিবন যাপন করছেন তারা।

ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক শফিকুল ইসলাম খন্দকার বলেন, রেকর্ড, দলিল, নামজারি ও খাজনা সব আমাদের নামে। অথচ পাশে খাস জমি রেখে পুরাতন খাল ভরাট করে আমাদের ফসলি জমিতে খাল পুনঃখনন করা হয়েছে। সরকারী কর্মকর্তাদের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে প্রভাবশালীরা খালটি সড়ায়ে দিয়ে খাস জমি নিজেদের দখলে নিয়েছে। বিষয়টি ঊচ্চমহলের তদন্ত দাবি করেন তিনি।

খাল পুনঃখনন কাজের তদারকি কর্মকর্তা লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডে উপ সহকারী প্রকৌশলী লিটন আলী বলেন, খালের পানি রক্ষায় যেটাতে সহজতর হবে। সেদিকে খালটি খনন করা হয়েছে। তবে কারো ব্যক্তিগত জমিতে নয়, খনন হয়েছে এক নং খতিয়ান ভুক্ত খাস জমিতে। তবে সেই জমির ভুমি উন্নয়ন কর কেন ভুমি অফিস গ্রহন করেছেন। সেটা ভুমি অফিসের বিষয় বলেও দাবি করেন তিনি।

কালীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) আবু সাঈদ বলেন, কৃষকদের অভিযোগটি সার্ভেয়ারকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। সার্ভেয়ার একাই দুই স্টেশনে দায়িত্ব পালন করায় তদন্ত করতে পারেননি। তবে দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর